ভ্যাকসিনের গুরুত্ব :
ইমিউনাইজেশন রোগ প্রতিরোধের একটি সহজ, নিরাপদ এবং কার্যকর উপায় , কারণ এটি অ্যান্টিবডি তৈরীর জন্য ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে শরীরকে একটি নির্দিষ্ট সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে প্রস্তুত করে তোলে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। করোনাভাইরাস, কোভিড-19, এর দ্রুত এবং সহজ বিস্তার এবং পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ফলে , করোনার ভ্যাকসিন ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে শরীরকে একটি নিরাপদ ইমিউন তৈরিতে সহযোগিতা করে যা সংক্রমণ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ দেশগুলিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভূমিকা রাখবে , সামাজিক দূরত্বকে সহজ করবে এবং যার ফলে আমরা এভাবে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবো।
ভ্যাকসিন কিভাবে কাজ করে ?
ভ্যাকসিন দেহের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষার সাথে কাজ করে রোগের ঝুঁকি কমায় , তাই যখন কেউ ভ্যাকসিন গ্রহণ করে তখন তার শরীরের ইমিউন সিস্টেম এর দ্বারা নিম্নবর্ণিত উপায় সাড়া দেয় :
- ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই তা চিনে ফেলে।
- অ্যান্টিবডি তৈরি করে (রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রাকৃতিকভাবে রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা দ্বারা উৎপাদিত প্রোটিন)।
- ভ্যাকসিন রোগ এবং কিভাবে রোগটির মোকাবেলা করতে হবে তা স্মরণ রাখে।
অতএব ভ্যাকসিন একটি নিরাপদ এবং স্মার্ট উপায়। একবার শরীর যখন ভ্যাকসিনের এক বা একাধিক ডোজ গ্রহণ করে , তখন এটি কোন ধরনের রোগ সৃষ্টি না করে , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। রোগাক্রান্ত হওয়ার পরে চিকিৎসার পূর্বেই ভ্যাকসিন রোগটিকে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ করবে।
কেন ভ্যাকসিন নেওয়া অতি জরুরী :
ভ্যাকসিন গ্রহণের দুটি প্রধান কারণ :
- নিজেদের সুরক্ষা।
- আমাদের আশপাশের মানুষদের সুরক্ষা।
- ভ্যাকসিন ছাড়া আমরা কোভিড-19 সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছি , যা প্রাণঘাতী হতে পারে।
যারা টিকা গ্রহণ করতে পারবে :
- 12 বছর এবং তার বেশী বয়সী সকল নাগরিক এবং বাসিন্দা টিকা গ্রহণ করতে পারবে।
ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ এবং কার্যকর ?
- এই টিকাকে নিরাপদ বলে মনে করা হয়; যেহেতু এটি ভ্যাকসিন পরীক্ষার পর্যায়গুলি কার্যকরভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং একটি শক্তিশালী ইমিউন প্রক্রিয়া ও টেকসই অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি সাধারণত ছোট এবং অস্থায়ী (যেমন, ইনজেকশনের জায়গায় হালকা ব্যথা , হালকা জ্বর বা মাথাব্যথা)।
- যে কোন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ভ্যাকসিন , ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হওয়ার পূর্বে একাধিক পর্যায়ে কঠোরভাবে পরীক্ষা করা হয় এবং নিয়মিত পুন -মূল্যায়ন করা হয়। ভ্যাকসিন স্বাস্থ্যের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো আলামতের জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য উপাত্ত ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করেন।
- মনে রাখতে হবে রোগ হওয়ার পরে তার চিকিৎসা করার চেয়ে রোগের প্রতিরোধ গড়ে তোলা উত্তম।
- সৌদি আরবে ভ্যাকসিন অনুমোদনের ক্ষেত্রে যে সমস্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হয়েছে তার সবগুলোই সরকারি পদক্ষেপ, যা সৌদি খাদ্য ও ঔষধ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পর্যবেক্ষণ করা হয়। ভ্যাকসিন অনুমোদনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কঠোর বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে, যাতে করে এটি উত্পাদন ও সরবরাহের নিরাপত্তা এবং ভ্যাকসিনের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়, যা সকল ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত একই পদ্ধতি।
ভ্যাকসিনের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কি ?
ভ্যাকসিন এর সাথে যুক্ত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া গুলো কেবল সাধারণ লক্ষণ যেমন : ভেক্সিনের জায়গায় লালচে ভাব এবং হালকা ব্যথা, সেইসাথে শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আর সৌদি আরবে আমাদের চিকিৎসা কর্মীদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় , যা স্বাস্থ্য কর্মীদের ভ্যাকসিনের সাথে সম্পর্কিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোকে মসৃণ ও নিরাপদভাবে মোকাবেলা করার ক্ষমতা নিশ্চিত করে। এবং সেটা ভ্যাকসিন গ্রহণকারী প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া :
- ক্লান্ত বোধ এবং মাথা ব্যথা।
- ইনজেকশনের জায়গায় হালকা ব্যথা ।
- মাংসপেশিতে ব্যথা এবং অসুস্থ বোধ।
- শরীরে হালকা জ্বর এবং কাঁপুনি।
এগুলি উপশম করার জন্য এই লক্ষণগুলো কিভাবে মোকাবেলা করবেন :
- মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, উচ্চ তাপমাত্রা এবং ক্লান্তি অনুভব হলে প্যারাসিটামল নিন।
- ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা, হালকা লালচে ভাব এবং যদি ফুলে যায় তাহলে এগুলো কমানোর জন্য ইনজেকশনের জায়গায় ঠান্ডা সংকোচন গ্রহণ করুন।
- পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করুন এবং যখন উদ্বেগ দেখা দেয় , তখন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করুন।
টিকা গ্রহণ পূর্ববর্তী করণীয় :
- টিকা গ্রহণের পূর্বে যদি কোন ধরনের অসুস্থতা অনুভব হয় তাহলে তা ডাক্তার কে অবহিত করুন (যেমন : উচ্চ তাপমাত্রা ) অথবা এই অবস্থার সাথে ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা নির্ধারণের জন্য অন্য কোনো উপসর্গ থাকলে তাও ডাক্তার কে অবহিত করুন।
- টিকা গ্রহণকারী যদি কোন দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগে তাহলে তারা ডাক্তারকে বিস্তারিতভাবে অবহিত করতে হবে ( যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হাঁপানি) , এর নিয়ন্ত্রণ এর মাত্রা এবং রোগী বর্তমানে কি ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করছে তার বর্ণনাও ডাক্তার কে অবহিত করবে।
- পূর্বে প্রাপ্ত কোন ভ্যাকসিন এর সাথে এলার্জির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে তা ডাক্তার কে অবহিত করুন।
টিকা গ্রহণের পদ্ধতি এবং এর ডোজ সংখ্যা :
ভ্যাকসিনটি ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন দ্বারা দেওয়া হয় , যেখানে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ 21 দিনের ব্যবধানে গ্রহণ করতে হয়।
এই বছরের মৌসুমী ফ্লু টিকা গ্রহণের গুরুত্ব :
- ইনফ্লুয়েঞ্জা সৃষ্টিকারী ভাইরাসগুলি শরত্কালে এবং শীতকালে সক্রিয় থাকে এবং নতুন করোনা ভাইরাসও এই সময়ে সক্রিয় হতে পারে।
- যদি কোনো ব্যক্তির করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে , তবে তাদের ফ্লু হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
- যদি কোন ব্যক্তি পূর্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে ফ্লুর টিকা নেওয়া নিরাপদ কারণ এটি ফ্লু প্রতিরোধে সহায়ক হবে।
- ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করা।
- ফ্লুর টিকা গ্রহণ , করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের যত্ন নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসেবা সংস্থানগুলির পরিধি বাড়াবে।
মৌসুমী ফ্লু ভ্যাকসিন এবং করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়ার মধ্যকার সময়ের ব্যাবধান :
- একই সময়ে ফ্লু এবং করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণে কোনো বাধা নেই, তবে প্রতিটি ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণের সুবিধার্থে, এবং একটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যাতে করে আরেকটির সাথে মিশে না যায় এজন্য দুটি টিকার মাঝে 3-4 সপ্তাহ সময় নেয়া যেতে পারে।
- আর করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে নাগরিক এবং বাসিন্দাদের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকবে, সেই সাথে ভ্যাক্সিন যাতে সহজ এবং অ্যাক্সেসযোগ্য উপায়ে সবার কাছে পৌঁছে সেটি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।
ভ্যাকসিন গ্রহণ পরবর্তী করণীয় :
- পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং টিকা পাওয়ার পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে প্রকাশিত সকল প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করতে হবে।
- টিকা গ্রহণের পরবর্তী তিন সপ্তাহ কোন ধরনের অসুস্থতা বা স্বাস্থ্যের পরিবর্তন টিকা গ্রহণকারীকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
- সুস্থ জীবনধারা গ্রহণ করা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উদ্বেগ ও চাপ থেকে দূরে থাকা , যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত তরল পান করা, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পানি, এবং পর্যাপ্ত সময় ঘুমানো।
* যতক্ষণ না ভ্যাকসিন সুরক্ষার সময়কাল সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় এবং যতক্ষণ না পর্যাপ্ত মানুষ করোনা (কোভিড –১৯) ভ্যাকসিনের আওতায় আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুসরণ করা এবং নিজেকে এবং অন্যদেরকে রক্ষা করার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।